শহীদ নিজামউদ্দীনের জন্ম নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সাইফউদ্দীন আহমেদ এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। মো. নিজামউদ্দীন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনর্গঠিত হয়ে যুদ্ধ করেন লালগোলা সাবসেক্টরে এবং শহীদ হন।মুক্তিযুদ্ধের তখন চূড়ান্ত পর্যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র তুমুল যুদ্ধ চলছে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী একের পর এক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রতিরক্ষা অবস্থান ও ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রচণ্ড আক্রমণের চাপে দিশেহারা পাকিস্তানিরা সমবেত হচ্ছে শহর এলাকার নিরাপদ অবস্থানে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো কোনো স্থানে তখনো পাকিস্তান সেনাবাহিনী পোড়ামাটিনীতি নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে আছে। সর্বাত্মকভাবে যৌথ বাহিনীকে প্রতিরোধ করছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। এ সময় ১২ ডিসেম্বর একদল মুক্তিযোদ্ধা হাকিমপুর থেকে অগ্রসর হতে থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে। তাঁরা ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাবসেক্টরের অধীন মুক্তিযোদ্ধা। এ দলের একজন সদস্য মো. নিজামউদ্দীন। পথে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পোড়াগ্রাম ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধারা ওই ঘাঁটির কাছাকাছি হওয়ামাত্র পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। তখন দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা টিকতে না পেরে কয়েকজন নিহত সহযোদ্ধা ও অনেক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের দু-তিনজন আহত হন। পাকিস্তানি সেনারা পোড়াগ্রাম থেকে পালিয়ে অবস্থান নেয় বহরমপুরে। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর মো. নিজামউদ্দীনসহ মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হন সেখানে। কাছাকাছি যাওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পশ্চাদপসরণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি আক্রমণ না করে এম্বুশের। তাঁর নির্দেশ পেয়ে তাঁরা দ্রুত অবস্থান নেন পাকিস্তানিদের পালিয়ে যাওয়ার পথে। মুক্তিযোদ্ধারা সড়কের এক স্থানে দুই ধারের ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। তারপর সময় গড়াতে থাকে। আশপাশে কোথাও মানুষজনের সাড়া নেই। চারদিক নিস্তব্ধ। যুদ্ধের ডামাডোলে স্থানীয় লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। সাহসী কয়েকজন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা সাহায্যকারী ও পথপ্রদর্শক। বেশিক্ষণ তাঁদের অপেক্ষা করতে হলো না। ৪০-৪৫ মিনিট পর মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পেলেন দুটি সেনাবাহী গাড়ি এগিয়ে আসছে। গন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গাড়ি দুটি গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠে মো. নিজামউদ্দীনসহ মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারা চিন্তাও করেনি এমন আক্রমণের। কারণ, তারা মনে করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা পেছনেই আছেন। আক্রমণের প্রথম ধাক্কাতেই হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। একটু পর পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। এমন সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মো. নিজামউদ্দীন। সহযোদ্ধারা গুরুতর আহত মো. নিজামউদ্দীনকে দ্রুত উদ্ধার করেন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। যুদ্ধশেষে সহযোদ্ধারা তাঁর মরদেহ সমাহিত করেন সেখানেই। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে শুধু মো. নিজামউদ্দীন শহীদ ও দু-তিনজন আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর এ কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর বিক্রম উপাধি পান।
শহীদ নিজামউদ্দীন ( বীর বিক্রম ); এক সাহসী বীর
শহীদ নিজামউদ্দীনের জন্ম নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার ফতেপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সাইফউদ্দীন আহমেদ এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। মো. নিজামউদ্দীন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী সেক্টরের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনর্গঠিত হয়ে যুদ্ধ করেন লালগোলা সাবসেক্টরে এবং শহীদ হন।মুক্তিযুদ্ধের তখন চূড়ান্ত পর্যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র তুমুল যুদ্ধ চলছে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনী একের পর এক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রতিরক্ষা অবস্থান ও ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। প্রচণ্ড আক্রমণের চাপে দিশেহারা পাকিস্তানিরা সমবেত হচ্ছে শহর এলাকার নিরাপদ অবস্থানে। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো কোনো স্থানে তখনো পাকিস্তান সেনাবাহিনী পোড়ামাটিনীতি নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে আছে। সর্বাত্মকভাবে যৌথ বাহিনীকে প্রতিরোধ করছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। এ সময় ১২ ডিসেম্বর একদল মুক্তিযোদ্ধা হাকিমপুর থেকে অগ্রসর হতে থাকেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে। তাঁরা ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাবসেক্টরের অধীন মুক্তিযোদ্ধা। এ দলের একজন সদস্য মো. নিজামউদ্দীন। পথে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পোড়াগ্রাম ঘাঁটি। মুক্তিযোদ্ধারা ওই ঘাঁটির কাছাকাছি হওয়ামাত্র পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। তখন দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা টিকতে না পেরে কয়েকজন নিহত সহযোদ্ধা ও অনেক অস্ত্রশস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের দু-তিনজন আহত হন। পাকিস্তানি সেনারা পোড়াগ্রাম থেকে পালিয়ে অবস্থান নেয় বহরমপুরে। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর মো. নিজামউদ্দীনসহ মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হন সেখানে। কাছাকাছি যাওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পশ্চাদপসরণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি আক্রমণ না করে এম্বুশের। তাঁর নির্দেশ পেয়ে তাঁরা দ্রুত অবস্থান নেন পাকিস্তানিদের পালিয়ে যাওয়ার পথে। মুক্তিযোদ্ধারা সড়কের এক স্থানে দুই ধারের ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। তারপর সময় গড়াতে থাকে। আশপাশে কোথাও মানুষজনের সাড়া নেই। চারদিক নিস্তব্ধ। যুদ্ধের ডামাডোলে স্থানীয় লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। সাহসী কয়েকজন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আছেন। তাঁরা সাহায্যকারী ও পথপ্রদর্শক। বেশিক্ষণ তাঁদের অপেক্ষা করতে হলো না। ৪০-৪৫ মিনিট পর মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পেলেন দুটি সেনাবাহী গাড়ি এগিয়ে আসছে। গন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গাড়ি দুটি গুলির আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠে মো. নিজামউদ্দীনসহ মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারা চিন্তাও করেনি এমন আক্রমণের। কারণ, তারা মনে করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা পেছনেই আছেন। আক্রমণের প্রথম ধাক্কাতেই হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। একটু পর পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। এমন সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মো. নিজামউদ্দীন। সহযোদ্ধারা গুরুতর আহত মো. নিজামউদ্দীনকে দ্রুত উদ্ধার করেন। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। যুদ্ধশেষে সহযোদ্ধারা তাঁর মরদেহ সমাহিত করেন সেখানেই। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে শুধু মো. নিজামউদ্দীন শহীদ ও দু-তিনজন আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর এ কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর বিক্রম উপাধি পান।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন