বারহাট্টা উপজেলা বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। বারহাট্টা উপজেলার উত্তরে কলমাকান্দা ও ধর্মপাশা উপজেলা, দক্ষিণে আটপাড়া ও মোহনগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে মোহনগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলা, পশ্চিমে নেত্রকোণা সদর উপজেলা। আয়তনের দিক দিয়ে উপজেলাটি ২২১.৫০ বর্গ কিমি। নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে এর দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার প্রায়। বারহাট্টা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- বাউসী ইউনিয়ন, সাহতা ইউনিয়ন, বারহাট্টা ইউনিয়ন, আসমা ইউনিয়ন, চিরাম ইউনিয়ন, সিংধা ইউনিয়ন, রায়পুর ইউনিয়ন।
পূর্ববঙ্গ ও আসাম গেজেটের নোটিফিকেশন নং ৬৬৭৬ তারিখঃ ১৫ই জুন, ১৯০৬ অনুসারে বারহাট্টা থানা প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই বারহাট্টাকে উপজেলায় রুপান্তর করা হয়। বারহাট্টা উপজেলার নাম করনের সময়কাল অনুমান করা হয় ১৮শ শতকের শুরু এবং ১৭শ শতকের শেষ পর্যায়কে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন পাগলপন্থি আন্দোলনের নেতা টিপু শাহ্ কে শায়েস্তা করার জন্যই নাটেরকোনা নেত্রকোনার তৎকালীন নাম অঞ্চলে ঘাটি বসায় ইংরেজরা।আন্দোলনকারীদের অনেকেই বারহাট্টার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করলে নৌ পথের সুবিধার জন্য বারাহট্টা বাজারের পার্শ্ববর্তি বরোহাটি/বরুহাটি/বৌহাটি গ্রামের আদূরে সেনা ছাউনী ফেলে। কংশ নদ তীরবর্তী বরুহাটি গ্রামের অনুকরনে BRA-HATTA উচ্চারণ করতেন সেনারা। তার থেকেই আস্তে আস্তে লোক্মুখে বারহাট্টা নামটি প্রচলিত হতে থাকে।
বারহাট্টা উপজেলা কংশ নদের তীরে অবস্থিত। উপজেলার অধিকাংশ এলাকা একসময় খাল-ছোট নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকলেও এখন উপজেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা কংস নদ সহ বাকিগুলাও মৃত প্রায়। বারহাট্টা উপজেলার উল্লেখযোগ্য নদী কংশ। এছাড়াও বিষনাইল, ধনাইখালী, লারখালী, গোলামখালী রাঙ্গাধাইর, কাউনাই, গোরাউৎরা, ধালেশ্বরী প্রভৃতি। নদীগুলো কালে ভরাট হয়ে মরা নদী বা বিলুপ্ত নদীতে পরিণত হয়েছে। কংশ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে গোলামখালী নদীর সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
ভারতীয় উপমহাদশেরে ব্রটিশি বরিোধী স্বাধীনতা আন্দোলনরে অন্যতম ব্যক্তত্বি, অগ্নযিুগরে বপ্লিবী জ্ঞানচন্দ্র মজুমদার, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধাদের ইনফর্মার আব্দুল লতিফ মাস্টার, কবি এবং চিত্রশিল্পী নির্মলেন্দু গুণসহ অনেক কীর্তিমানের জন্ম এ বারহাট্টায়। এখানকার প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদের মধ্যে আমঘাইল পিরিজপুর গ্রামের জোড়াপুকুর, সিংধার দেব মন্দির, সাউদপুরের ভগ্ন ইমারত (মুগল আমল) উল্লেখযোগ্য। বারহাট্টা সিকেপি উচ্চ বিদ্যালয় বারহাট্টার প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বারহাট্টার অসংখ্য তরুন যুবক দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করে বেশ কয়েকজন শহীদ ও নিখোঁজ হন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে পাকবাহিনীর গতিরোধ করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনী উপজেলার পশ্চিম সীমান্তের ঠাকুরকোণা রেলওয়ে ব্রীজটি মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিধ্বস্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে এ উপজেলাকে পাকবাহিনীমুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণ করে এবং উভয়পক্ষের ব্যাপক গুলিবিনিময়ের ফলে কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বারহাট্টা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুকশেদ মিয়ার স্মৃতি রক্ষার্থে বারহাট্টা হতে চন্দ্রপুর গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ হয় ’শহীদ মুকশেদ সড়ক’।
বারহাট্টা উপজেলায় দেশীয় খেলা হিসাবে হা-ডু-ডু, বলি খেলা, দারিয়াবান্দা, গোল্লাছুট, কানামাছি, মইল্লা, ষাড়ের লড়াই,ঘুড়ি উড়ানো ইত্যাদি। বিদেশী খেলাধুলার মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট ,ব্যাডমিন্টন,ভলিবল খেলা অন্যতম । বিনোদনের জন্য পূর্বে যাত্রাগান,জারি-সারি-কবি গানের প্রচলন থাকলেও এখন তা বিলুপ্ত প্রায়। মাঝে মাঝে বাউল গানের আসর অয়োজন হয়।
এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন হলেও সকল নাগরিক এখনো বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পায়নি। এ অঞ্চলের অর্থনীতির প্রধান মাধ্যম কৃষি এবং বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী। এখানকার প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, কলাই, সরিষা, শাকসবজি প্রভৃতি। গোপালপুর বাজার, বাউসী বাজার, গেরিয়া বাজার, নৈহাটি বাজার, নিচিন্তপুর বাজার ও মনাষ বাজার উপজেলার উল্লেখযোগ্য বাজার।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন