বিরিশিরি কালচারাল একাডেমী; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষক

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহে বসবাসকারী গারো, হাজং, কোচ, বানাই, ডালু,মান্দাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, পরিচর্যা, উন্নয়ন ও চর্চা এবং লালনের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহকুমার দুর্গাপুর থানাধীন বিরিশিরিতে এ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।  যখন এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সামাজিক প্রথা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, নৃত্য-গীত, লোকাচার তথা ঐতিহ্যবাহী, আকর্ষণীয়, বর্ণিল মূল্যবান সংস্কৃতি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছিল তখন এ প্রতিষ্ঠানটি মহীরুহ হিসেবে আবির্ভুত হয়। 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি অত্রাঞ্চলের সেসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীয়দের বিলীয়মান সংস্কৃতি সংরক্ষণ, লালন, চর্চা ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নসাধন সহ বৃহত্তর জাতীয় সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে সেগুলোর বিকাশকে সাবলীল, সহজীকরণ ও সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সম্মুখে রেখেই এসব নৃ-গোষ্ঠী সমূহের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, নৃত্য-গীত প্রভৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, নিয়মিত চর্চা, সংশ্লিষ্ট নৃ-গোষ্ঠীদের নিজ সংস্কৃতি ভালোবাসা ও সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধকরণ; তাদের প্রধান উৎসব সমূহ সংরক্ষণ; প্রকাশনা, অডিও-ভিজুয়্যাল প্রভৃতির মাধ্যমে সংরক্ষণ; জাতীয় সংস্কৃতির মূল শ্রোতধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হিসেবে এর উপর গবেষণা ও উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার প্রয়াসে এ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যাদি সম্পাদন করে আসেছ। 

প্রসংগত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ,
উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র  নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে ‘ক্ষুদ্র  নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০১০’ কার্যকর করা হয়। উক্ত আইন অনুসারে বর্তমানে বিরিশিরি কালচারাল একাডেমী পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ৩.২১ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর চারটি শাখা রয়েছে। ক) সংস্কৃতি খ) গবেষণা গ) লাইব্রেরি ও ঘ) জাদুঘর। এটি একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত। এর প্রথম পরিচালক ছিলেন সিস বিভা সাংমা। 

দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীতে একটি সুপরিসর দ্বিতল ভবন ও একটি রেষ্ট হাউস রয়েছে। এখানে প্রতি বছর উপজাতীয়দের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী তে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটির নাম বার্ষিক আদিবাসী সাংস্কৃতিক উৎসব। এক সময় তা গারোদের 'ওয়ানগালা' নামে উদযাপিত হতো। পরবর্তীতে অন্যান্য উপজাতির অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করে উৎসবটির নাম পাল্টে রাখা হয়। প্রতি বছর এ অনুষ্ঠানে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার গারো, হাজং, হদি, ডালু, কোচসহ আদিবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল তাদের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলের মধ্যে এক মেলবন্ধন রচিত হয় উৎসবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর জনসমাগম হয়। 
Share on Google Plus

About Ripon Abu Hasnat

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন