নেত্রকোণার ঐতিহাসিক স্থাপত্য ‘রোয়াইলবাড়ি দূর্গ’

নেত্রকোণা জেলায় বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে। সেসব স্থাপত্যগুলো অধিকাংশই এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে কিছু স্থাপত্য এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য ‘রোয়াইলবাড়ি দূর্গ’। এটি বেতাই নদীর তীরে কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রোয়াইলবাড়ি নাম স্থানে অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন দূর্গ ও বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। দূর্গটি ‘কোটবাড়ী দুর্গ’ নামেও পরিচিত। প্রাচীন রোয়াইলবাড়ি দূর্গের স্থাপনা হিসেবে বর্তমানে ছাদবিহীন কিছু ইমারত অবশিষ্ঠ রয়েছে। ৪৬ একর জমির উপর অবস্থিত পুরো দূর্গটি পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বা ও প্রাচীর দ্বারা বিভক্ত। দূর্গের প্রাচীর নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ইট। দূর্গে রয়েছে একটি পুকুর, দুটি ঢিবি, একটি কবরস্থানসহ বেশকিছু প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। খননকাজ পরিচালনাকালে এখানে প্রাচীন ইটের ভংগ্নাংশ, মৃৎপ্রাত্র, মূর্তি ও মূল্যবান কিছু পুরাকীর্তি পাওয়া যায়। 

রোয়াইলবাড়ি দূর্গের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রত্নতত্ত্ববিদগণদের মধ্যে অনেকেই এটিকে সুলতানী আমলের স্থাপনা বলে মনে করেন। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ্-এর পুত্র নছরত শাহ্, এ অঞ্চলে বসবাসের সময় দুর্গটি তৈরি/সম্প্রসারণ করেন। পরবর্তিতে ঈশা খাঁ এর আমলেও দুর্গে ব্যাপক সম্প্রসারণের কাজ করা হয়। ঈশা খা জঙ্গলবাড়ির সাথে রোয়াইল বাড়ি পর্যন্ত সহজে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি সড়ক তৈরি করেন যা ধ্বংস হতে হতে এখন নিশ্চিহ্ন। প্রচলিত আছে, একসময় বাংলার সুলতান হোসেন শাহ, নছরৎ শাহ এবং ঈশাঁখার অশ্বরোহী বাহিনীর ঠক ঠক শব্দে কেঁপে উঠত এই রোয়াইলবাড়ির মাটি। ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পারিষদ দেওয়ান জালাল এখানকার আধিপত্য গ্রহণ করেন। তিনি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের ব্যাপক সংস্কার এবং বহিরাঙ্গনে একটি সুদৃশ্য মসজিদ নির্মাণ করেন। যা ‘মসজিদ- এ জালাল’ বা ‘জালাল মসজিদ’ নামে পরিচিত ছিল। 

৮০’র দশকে আবিষ্কৃত এ স্থাপনাটি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নথিভূক্ত করে। দূর্গটি সংরক্ষিত ঘোষণার পর ১৯৯১-৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখানে খননকাজ পরিচালনা করে। প্রায় দুই যুগ পূর্বেও এসব নিদর্শন মাটির নিচে চাপা ছিল। উদ্ধারকৃত এই নিদর্শন দেখে অনেকের অনেক ধরনের অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন এটি একটি ১২ দুয়ারী মসজিদ ছিল হয়তো। কঠিন কারুকার্জসম্পন্ন দেয়াল এবং এক একটা পিলার। পিলারগুলো পাথরের। পাশে রয়েছে একটি সুরঙ্গ। আর সেখানেই নিয়ামত বিবির মাজার। জনশ্রুতি অনুসারে নিয়ামত বিবি ছিলেন বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বোন। তার আসল নাম সুভাদ্রা। তাকে শাসক ঈশাঁ খাঁ অপহরণ করেন ও পরবর্তীতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি নিয়ামত বিবি নামে পরিচিতি পান। নিয়ামত বিবির মাজার রোয়াইলবাড়ি দুর্গের সীমানা প্রাচীরের ভেতর দক্ষিণাংশে অবস্থিত।

যোগাযোগ ব্যাবস্থা এবং প্রচারণা যদি আরো বৃদ্ধি করা যায় তাহলে এটি নেত্রকোনার জন্য একটি ভালো পর্যটন স্পট হিসেবে পরিগণিত হতে পারবে। এতে নেত্রকোনার যেমন সুনাম বাড়বে তেমনী একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভের পাশাপাশি সরকারও লাভবান হবে।

Share on Google Plus

About Ripon Abu Hasnat

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন