
মদন উপজেলার পূর্বাংশ এক সময় খালিয়াজুরী পরগনা ও পশ্চিমাংশ নাসিরূজিয়ান পরগনা ভুক্ত ছিল। দেওয়ান ঈশাখাঁ-র পারিষদ মজলিস জালাল এর বংশধর দেওয়ান ফতেহ খাঁ এবং পরে দেওয়ান জাহাঙ্গীর-র শাসন ভূক্ত ছিল এ মদন। দেওয়ান ফতেহ খাঁ-র নামানুসারে ফতেপুর ও দেওয়ান জাহাঙ্গীর নামানুসারে জাহাঙ্গীরপুর আজো সুপরিচিত। মদন সম্পর্কে কথিত আছে মদন নামক এক সামন্ত ভূস্বামীর নামানুসারে মদন নামের উদ্ভব। তবে এই নামকরণে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে, কোন কোন ঐতিহাসিক মনে করেন যে পারস্যবাসীদের এ অঞ্চলে আগমণকালে মুদন বা মদন নামের উদ্ভব। ফার্সী শব্দ মুদন এর বাংলা অর্থ শহর বা নগর। সেই থেকেই মুদন, পরে শব্দের অপভ্রম্যতায় মদন নামে পরিচিত। অপরদিকে ফার্সী শব্দ মদন বলতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বা দন্ডায়মান হওয়াকেও বুঝায়।
১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কেন্দুয়ায় পুলিশ প্রশাসন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বর্তমান মদন উপজেলার আখশ্রী গ্রামে কেন্দুয়া থানার একটি ফাড়ি স্থাপিত হয়েছিল। সে সময় মদন ও ফতেপুর ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ছিল। কালের প্রবাহে মদনের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। এতে যোগাযোগসহ শাসন প্রক্রিয়ারও পরিবর্তন আসে। এক পর্যায়ে আখশ্রী থেকে ফাড়ি থানা প্রত্যাহার করে নায়েকপুরে স্থানান্তর করা হয় এবং পূর্ণাঙ্গ থানা স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। খালিয়াজুরী, আটপাড়া ও কেন্দুয়ার ১৩১টি গ্রাম নিয়ে ১৯১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মদন থানা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৪/১২/১৯১৮ তারিখের এক প্রজ্ঞাপনমূলে মদন থানাকে পুলিশ বিভাগ অনুমোদন প্রদান করে। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে মদন থানায় সার্কেল উন্নয়ন ও রাজস্ব বিভাগ খোলা হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মদনকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।


১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মদন উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক লড়াই সংঘটিত হয়। ৭ নভেম্বর সংঘটিত লড়াইয়ে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। ৮ নভেম্বর বাঙ্কারে আটকা পড়া পাকসেনাদের উদ্ধারের সময় মদন থানায় পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে ৫৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী চারুচন্দ্র অধিকারী (১৮৬৮ - ১৯২৮) ও অমূল্যচন্দ্র অধিকারী (১৯০১ - ১৯৫১) এ এলাকার কৃতি ব্যক্তিত্বের মধ্যে অন্যতম।
মহুয়া মলুয়ার দেশ খ্যাত নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলার সাধারণ মানুষ খুবই সাংষ্কৃতিকমনা। এ উপজেলায় নৌকা বাইচ, ষাড়ের লড়াই, বাউলগান, যাত্রা, নাটক বছরের বিভিন্ন সময় পালাক্রমে অনুষ্ঠিত হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন