খ্যাতিমান বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক,
গল্পকার, নাট্যকার,
ঔপন্যাসিক খালেকদাদ চৌধুরী ১৯০৭ সালের
২ ফেব্রুয়ারি
নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার চানগাঁও
গ্রামে তাঁর
নানার বাড়িতে
জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক
নিবাস নেত্রকোনা
জেলার আটপাড়া
উপজেলার সোনাজোড়
গ্রামে।
তাঁর পিতার
নাম নওয়াব
আলী চৌধুরী
এবং মাতার
নাজমুন্নেছা চৌধুরী। খালেকদাদ চৌধুরী
বার ভূঞাদের
বংশধর।
পিতামাতার আট ছেলে ও দুই
মেয়ের মধ্যে
খালেকদাদ চৌধুরী
ছিলেন সবার
বড়।
খালেকদাদ চৌধুরী ১৯১১
সালে নাজিরগঞ্জ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম শ্রেণীতে
ভর্তি হন। সেখান
থেকে প্রাথমিক
পাশ করে
১৯১৬ সালে
মদন উপজেলার
জাহাঙ্গীরপুর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি
হন।
পরের বছর জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দত্ত হাইস্কুলে
ভর্তি হন। এ স্কুল থেকে
১৯২৪ সালে
প্রথম বিভাগে
ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য
কলকাতায় লর্ড
রিপন কলেজে
ভর্তি হন। পরে
কলকাতারই ইসলামিয়া
কলেজে ইংরেজি
বিভাগে স্নাতক
(সম্মান) শ্রেণীতে
ভর্তি হন।
১৯২৭ সালে বাবা
নওয়াব আলী
চৌধুরীর মৃত্যু
হলে সংসারের
সব দায়-দায়িত্ব খালেকদাদ
চৌধুরীর উপর
এসে পড়ে। সংসারের
প্রয়োজনে লেখাপড়া শেষ না করেই
নেত্রকোনা চলে আসেন তিনি।
১৯২৯ সালে
কলকাতা মিডল্যান্ড
ব্যাংকের নেত্রকোনা
শাখায় সুপারভাইজার
হিসেবে কর্মজীবন
শুরু করেন। পরবর্তীতে
১৯৩০ সালে
ব্যাংকের চাকরি
ছেড়ে দিয়ে
কলকাতা করপোরেশনের
একটি বিদ্যালয়ে
সহকারী শিক্ষক
হিসেবে যোগ
দেন।
১৯৪৪ সালে
তিনি জনসংযোগ
কর্মকর্তা হিসাবে সরকারী চাকরিতে যোগ
দেন।
১৯৬১ সাল
পর্যন্ত নেত্রকোনা
সুনামগঞ্জ ও সিলেটে জনসংযোগ
কর্মকর্তা হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন
করেন।
তিনি দীর্ঘদিন
আদর্শ শিশুকিশোর
সংগঠন নেত্রকোনা
মধুমাছি কঁচি-কাচার মেলার
পরিচালক ছিলেন। পাশাপাশি
তিনি রেড
ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বও
পালন করেন। তিনি
নেত্রকোনাযর সাধারণ গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৭১ সালের
স্বাধীনতা যুদ্ধেও তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম
সংগঠকের ভূমিকা
পালন করেন।
কলকাতা মিডল্যান্ড ব্যাংকে
কর্মরত থাকার
সময় তিনি
লেখালেখি শুরু
করেন।
এ সময়
গদবাধা চাকুরী
জীবনের চেয়ে
লেখক জীবনেই
বেশি আনন্দ
অনুভব করেন। তাঁর
প্রথম কবিতা
ছাপা হয়
কবি বন্দে
আলী মিয়া
সম্পাদিত এবং
কলকাতা থেকে
প্রকাশিত 'বিকাশ' নামের একটি পত্রিকায়।পরবর্তীতে
তাঁর লেখালেখি
আরও গতি
পায়।
স্কুলে শিক্ষকতা
করার সময়
বাড়তি আয়ের
জন্য আবুল
মনসুর আহম্মদ
সম্পাদিত দৈনিক
কৃষক-এর
কিশোর সাহিত্যপাতা
‘চাঁদের হাট’
শাহাদাত চৌধুরী
ছদ্মনামে পরিচালনা
করতেন। সেসময় তিনি সবার কাছে "মামা"
নামে পরিচিত
ছিলেন।
১৯৪১ সালে
খালেকদাদ চৌধুরী
বিদ্রোহী কবি
কাজী নজরুল
ইসলামের সান্নিধ্যে
আসার সুযোগ
পান।
তিনি নজরুলের
সাহিত্য আড্ডাগুলোয়
নিয়মিত যোগ
দিতেন।
নজরুল সম্পাদিত
দৈনিক নবযুগ-এ তিনি
সাহিত্য সম্পাদকের
দায়িত্ব পালনের
পাশাপাশি "আগুনের ফুলকি" নামে কিশোর
পাতা "আতশবাজ" ছদ্মনামে পরিচালনা করেন। মাসিক
সওগাত, মাসিক
মোহাম্মদী, মাহে নও, দিলরুবা, যুগবাণী,
সচিত্র সন্ধানী,
পাকিস্থান খবর, প্রতিধ্বনি প্রভৃতি সাহিত্যপত্রে
তিনি নিয়মিত
লিখতেন।
তিনি নেত্রকোনা
থেকে প্রকাশিত
পাক্ষিক উত্তর
আকাশ ও
সাহিত্য সাময়িকী
সৃজনী সম্পাদনা
ও নিয়মিত
প্রকাশ করে
তখনকার নবীন
লেখকদের উত্সাহিত
করেন।
তাঁরই নিবিড়
হাতের ছোয়ায়
তৈরী হন
আজকের নির্মলেন্দু
গুণ, রফিক
আজাদ, জীবন
চৌধুরী, শান্তিময়
বিশ্বাস, হেলাল
হাফিজের মতো
আরও অনেকেই।
উপন্যাস ,গল্পসংকলন, প্রবন্থ,
অনুবাদ, নাটক
ইত্যাদি সবমিলিয়ে
খালেকদাদ চৌধুরীর
প্রকাশিত গ্রন্থ
সংখ্যা ১৫। যার
মধ্যে একটি
আত্মার অপমৃত্যু,
রক্তাক্ত অধ্যায়,
চাঁদ বেগের
গড়, শাপ
মারির অভিশাপ,
এ মাটি
রক্তে রাঙ্গা,
মরু সাহারা,
বাহার-ই-স্থান-ই
গায়েবী, আল
বকর দ্বীপ,
বিশ্ব সাহিত্য
পরিচয়, অভিশপ্ত
মসনদ (নাটক),
শতাব্দীর দুই
দিগন্ত (আত্মজীবনীমূলক
গ্রন্থ) উল্লেখ্যযোগ্য। সাহিত্য
চর্চার স্বীকৃতি
স্বরুপ ১৯৮৩
খ্রীস্টাব্দে খালেকদাদ চৌধুরীকে বাংলা একাডেমী
সাহিত্য পুরস্কার
দেওয়া হয়।
১৯৮৫ খ্রীস্টাব্দের ১৬
অক্টোবর ৭৮
বছর বয়সে
এই বরেণ্য
সাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর
অবদান নতুন
প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এবং
স্মৃতি রক্ষায়
নেত্রকোনা সাহিত্যসমাজ ১৯৯৭ সালে খালেকদাদ
চৌধুরী সাহিত্য
পুরস্কার প্রবর্তন
করে।
প্রতি বছর
পহেলা ফাল্গুনে
দেশবরেণ্য একজন কবি বা সাহিত্যিককে
এ পুরস্কার
দেয়া হয়। এ নাগাদ এ
পুরস্কার প্রাপ্তদের
তালিকায় রয়েছেন-অধ্যাপক যতীন
সরকার, কবি
রফিক আজাদ,
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, অধ্যাপক কবীর
চৌধুরী, কবি
নির্মলেন্দু গুণ, কবি মহাদেব সাহা,
নাট্যকার সেলিম
আল-দীন,
মুহম্মদ জাফর
ইকবাল, লেখিকা
রাবেয়া খাতুন,
কবি হেলাল
হাফিজ, সাহিত্যিক
বুলবন ওসমান,
কবি আবু
হাসান শাহরিয়ার,
কথা সহিত্যিক
আনিসুল হক।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন